কলেজের গোধুলি সময়ের প্রথম মিলন থেকে শুরু করে দ্বিধাগ্রস্ত পালানো, দুই শহর অতিক্রম করে গ্রামবন্দী আশ্রয়, দুরত্ব আর পরিবারের বাধার বিরুদ্ধে লড়াই—সবকিছুর পর শাকিব-রিয়ার অটল ভালোবাসা যেন জীবনের সব প্রশ্নের উত্তর হয়ে ওঠে।
ভালোবাসার পরাবাস্তব রেখা
গোধুলির হালকা আভাতে ঢাকা কলেজ মাঠের প্রাচীন গাছতলায় দাঁড়িয়ে ছিল রিয়া। তার মনের ভিতরে শত শত জটিল আবেগের স্রোত বইছিল—অবসাদ, আশা, তীব্র আকাঙ্ক্ষা আর এক অপার অনিশ্চয়তা। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাকিব, যার চোখে তীব্র এক অনুরোধ, মনেই বেজে উঠেছিল না যেন শাপমুক্তির সুর। তাদের কথা বলতে পারছিল না কেউ—শুধু বাতাসে ভাসছিল মৃদু ছন্দ, যেন গাছের পাতার ফিসফিসানির মতো অদৃশ্য কোন সুর।
রিয়া অচেতন ভাবে হাতের বাঁশি থেকে চেনা সুর তুলে আনল—আছে না কোনো দৃশ্যমান সুর, কিন্তু মনেই বাজছে অশ্রুস্নিগ্ধ এক সুরের মতো। সে স্মরণ করল, ছোটবেলায় শাকিবের সঙ্গে মিলিত প্রথম দিনের কথা—স্কুলের স্যানিটারি ব্লক গেটের পাশেই শাকিব তাকে সেহরি দিয়েছিল, যেন জীবনের প্রথম মানুষের মতন একটা যত্ন। তখন বুঝিনি ভালোবাসা কী… শুধু মাথায় এসেছিল, কারো জন্য নিজেকে উজাড় করে দেওয়া গেলে জীবন কতটা সহজ হতে পারে।
শুক্রবার বিকেলের সেই প্রথম দেখা হয়েছিল কলেজ লাইব্রেরির কোণে, যখন রিয়া বই খুঁজছিল আর শাকিব হঠাৎ সামনে এসে বলল, “তুমি কি ‘প্রেমের কবিতা’ পাঠ করছ?” সে ভয় পেয়েছিল ভালোবাসার মতন সরাসরি প্রশ্ন শুনে, অথচ প্রশ্নটা ভাসিয়ে দিয়েছিল অজানা ভালোবাসার জলের কূপে।
তারপর থেকে দুই বছর কেটে গেল—হাসি, কান্না, আড্ডা, স্মৃতি, প্রতিশ্রুতি। একবার একসঙ্গে কলেজ ফেস্টে তাত্ত্বিক নাটক রচনা করেছিল তারা। রিয়া বাদল রাতে জঙ্গলের তৈলছড়ার ভয়ে কেঁদেছিল, আর শাকিব হাত ধরে ঝুলে নেমে গিয়েছিল অজপাখি-বিটুম-মন্থর পদক্ষেপে, যেন দুই আঁচিল এক হয়ে একঝাঁকে কাঠবেড়ালি হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু জীবন যেন অকারণে নির্দয়—রিয়ার অনগ্রহী পরিবার জানতে পেরেছিল তাদের সম্পর্কের কথা। রিয়ার বাবা ভেবেছিলেন, “ঐ ছেলে কোন টেকসই পেশায় যাবে? ওর বাবা সরকারি কর্মচারী, কথায় কথায় বদলে যায় পোস্টিং।” এক সন্ধ্যায় জরুরি ডাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে ঠিক করে দিতে চাইলেন। রিয়া কান্নায় ভেঙে গিয়েছিল, আর শাকিব বুঝতে পেরেই গিয়েছিল, হয়তো ছাড়া হয়নি তার সাথেই নির্ভরতার বন্ধন।
ওই রাতেই, কলেজ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে শাকিব বলল, “যদি আমাদের ভালোবাসা সত্যি হয়, তাহলে যে বাধাই আসুক, তার মুখ থেমে যাবার নেই।”
রিয়া কাঁদতে কাঁদতে স্বীকার করেছিল, “আমার পরিবার চাইছে আমি তাদের ইচ্ছায় বিয়ে করবো… আমি কি যোগ্য হব তোমার সাথে লড়তে?”
শাকিবের চোখে উঠল অগ্নিশিখা—“তোমার জন্য আমি যেকোনো ঝুঁকি নেব, তবুও তোমাকে ছাড়া ভালোবাসা বৃথা।”
পরের দিন তারা কলেজের সেই পুরনো বটগাছের ছায়ায় মিলিত হয়েছিল, যেখানে তারা প্রথম প্রেমের অঙ্কন করেছিল চকের তীব্র রেখায়। শাকিব হাতে একটা ছোট্ট নোটবই নিয়ে এসেছিল—সেখানে লেখা ছিল তাদের পরিকল্পনা: পালিয়ে বিয়ে, শহর ছেড়ে পুরনো বাড়ি ফিরে যাওয়া, ছোট্ট একটা জীবন শুরু করা যেখানে থাকবে শুধু দুজনে আর একটুকু সুখ।
রিয়া বলেছিল, “তবে তোদের সুযোগ কতটুকু?”
শাকিব হেসে বলল, “জীবনে সুযোগ হয়তো নাই, তবে সাহস আছে বলেই জীবন।”
তারা সিদ্ধান্ত নিলো অবসর ভ্যাকেশনেই চলে যাবে হুগলির নিকটের এক ছোট্ট গ্রাম, যেখানে শাকিবের স্কুলফেরত আড্ডার স্মৃতি আছে। ভ্যাকেশন শুরু হতেই, তারা দুই টুকরো হাতে বাড়ির লুকানো টাকাগুলো নিয়ে রওনা হল—একটা নতুন পরিচয় দিয়ে, যাত্রাপথে টিকিট কাটল অচেনা নামেই।
প্রথম দিন ছিল এক অবর্ণনীয় আনন্দময়। ছোট্ট গ্রামটায় আকাশ এত নীল হবে, মেঘ এত শান্ত, যে মানুষ শোনাবে কেবল নিজে মুখে বলা হেসে উঠা কথা আর পরশের হাসির প্রতিধ্বনি। রিয়া শাকিবের কাঁধে মাথা রেখে বলল, “যেখানে কোনো ভয়ের ছায়া নেই, সেখানেই ভালোবাসা জন্মায়।”
সব ঠিকঠাক চলছিল, যতক্ষণ না হঠাৎ খবর এলো—রিয়ার বাবা গোপনে পুলিশের মাধ্যমে তাদের খোঁজ নিচ্ছে। রুহের ফাঁদে তাদের টিকিট কাটানো নাম এবং আগের ঠিকানা মিললে মুহূর্তেই গ্রাম পুলিশ হাজির হতে পারে।
রিয়া কেঁদে চিৎকার করে বলল, “আমরা এতদূর এসেছি! আর এভাবে ধরা পড়ে যাব?”
শাকিব গায়ে হাত বুলিয়ে স্বীকার করল, “ভয় পাওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু ছুটে পালাতে পারলে ভালোবাসা মরবে না।”
দিন আর রাতের ভেতর লুকিয়ে, তারা গ্রামবন্দী নয়নাভিরামের গ্রাম পথ বেয়ে পালিয়ে যেতে শুরু করল। একবার ট্রাকে উঠে নদীর পাড়ে নামল, আবার ভ্যান যোগে এমুঠো দিক পরিবর্তন করল। কে জানে, তাদের জন্য গ্রামবাসী কেউ সাহায্য করবে কি করবে না—সবটাই ছিল নিশ্চিতহীন এক ভ্রমণ, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপে চুইয়ে পড়ে অজানা বিপদ।
এক সন্ধ্যায়, কিঞ্চিৎ অন্ধকারে তারা একটি পরিত্যক্ত মন্দির দেখতে পেলো। ভিজে দানাবান্তা আকাশ থেকে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে, মন্দিরের পাথরের ফাঁক গলাধঃক্ষ করে নিচে পড়ছে। মন্দিরের প্রবেশ পথে রিয়া থমকে বলল, “এখানেই থামি?”
শাকিব বলল, “এখানেই নিরাপদ, কেউ বোঝে না—এখানে রাত কাটাব।”
তারা মন্দিরের ভেতর ঢুকে এক শুকনো করিডোরে থাকা পুরনো ধানুকপোড়া কাঠের বেঞ্চে বসল। রিয়া কাঁপতে কাঁপতে বলল, “কতটা সময়?”
শাকিব উত্তর দিলো, “যতক্ষণ ভোরের সূর্য নেমে না আসে।”
রিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমি চাই তুমি বুঝতে, তোমার এই সহিংস সাহসিকতার কি দাম?”
শাকিব ঢিলে হাসিশয়ে বলল, “যদি তোমার আনন্দের দামই সাহস, সে দাম আর চাই না।”
তাদের দুজনের চোখ ভিজে উঠল, এক সঙ্গে হাত মেলাতে গিয়ে বুঝতে পারল, এই ভয় আর নিরাপত্তাহীনতার মাঝেও তাদের ভালোবাসা আরো চিরকালীন হবে।
অন্ধকারের বুকে রিয়া স্মরণ করল—যখন কলেজের প্রথম বর্ষে এক পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছিলো, তখন শাকিবই বলেছিল, “ব্যর্থতা মানে তুমি হেরে যাওনি, মানে তুমি নিজেকে নতুন করে গড়ছ।” আজও সে কথা বুকের অতলে বাজছিল।
রাত যত গভীর হলো, বৃষ্টির শব্দ তত বাড়লো। মন্দিরের ভেতরের স্তম্ভগুলোতে টিকটিকির ডাক আর দূরে দাসভক্তদের গম্ভীর সন্ন্যাসীর মন্ত্রোচ্চারণ মিলিত হয়ে তৈরি করল এক অনাহূত সমন্বয়। রিয়া হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি আর থাকতেছি পারব না—আমাদের ফিরে যেতে হবে, না হলে তুমি…”
শাকিব তার কণ্ঠ থামিয়ে খুলে বলল, “আমি চাই না তুমি ঝুঁকিতে পড়ো, তাই যেখানেই নিরাপদ জায়গা, তুই আমাকে সেখানে নিয়ে চলে যাস।”
রিয়া বুঝতে পারল, জীবনে ভালোবাসা মানে কখনো নিজের প্রিয়জনের জন্য সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ করা। সে তাদের লুকানো ব্যাগ থেকে চাকরির আবেদনপত্র বের করল, “আমি এখানকার তত্ত্বাবধায়ক স্কুলে কাজের জন্য আবেদন করতে পারি, যাতে তুমি গিয়ে পড়াশোনা করে স্বপ্ন পূরণ করতে পারো।”
শাকিব কাঁদতে কাঁদতে বলল, “তুই নিজের স্বপ্ন ভুলে চলে যাবে?”
রিয়া মৃদু হেসে বলল, “আমার স্বপ্ন তোমার স্বপ্নের সঙ্গে মেশে—তুমি ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকি।”
পরের ভোরের আলো ফুটতেই তারা মন্দির ছেড়ে চলে এলো—হাত ধরে হাত রেখে, চোখে চোখ রেখে, আশার আলো ছড়িয়ে যায় সারাজীবন।
চেষ্টা করে যে শহর খুঁজে পেলো, সেখানে একটা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রিয়া নিয়োগ পেলো। শাখা শিক্ষক হিসেবে যোগদানের দিন, শাখার প্রধান অধ্যক্ষ তাকে দেখে অবাক—“তুমি এখন এখানে? কিন্তু তোরা…।” রিয়া নির্বিকার চোখে বলল, “আমি ঠিক আছি, আর সঙ্গে আছি আমার ভালোলাগার মানুষ।”
অপরদিকে শাকিব ঢুকে পড়ল জেলা শহরের এক কোচিং সেন্টারে পড়া-লেখা চালিয়ে নিয়ে, রাতে রেস্তোরাঁয় ঠেলা-ইয়ান্টোয় কাজ করে কিছু টাকা উপার্জন করতে শুরু করেছে। হাটাত্ এক দিন রিয়া ক্লাস শেষে ফেলে দেয়া ব্যাগে দেখি তাজা পত্রিকা—শাকিবের পরীক্ষার ফলাফল ছাপা। সে উত্তীর্ণ হয়েছে জেলা স্তরের প্রবেশিকা পরীক্ষায়, আর ভর্তি হতে চলেছে এক সরকারি মহাবিদ্যালয়ে।
রিয়া আনন্দে উল্লাসে কণ্ঠে বলল, “এবার তুমি যা চেয়েছিলে, সবই পূরণ করবে!”
শাকিব শিহরণ নিয়ে বলল, “যখন আমরা একসঙ্গে হয়েছি সেই গোধুলির দিনে, আমি স্বপ্ন দেখি—একটা সুন্দর ভবিষ্যতের, যেখানে কোনো বাধা নেই।”
তাদের দিনগুলো কাটতে লাগল—কালি-চায়ের চুমুকের মধ্যে জীবনকথা, রাতের আলোয় একসঙ্গে পড়া, ছুটির সময়ে ছোট্ট গোপন ঘোরাঘুরি। প্রতিটি মূহূর্তে ভালোবাসা যেন তাদের যৌথ পরিচয়ে খোলা বইয়ের মতো বিকশিত হচ্ছিল।
কিন্তু এখনো বহমান ছিলো পরিবারের চাপ। এক বিকেলে রিয়ার মা ফোন করে জানালেন, “তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে… ওর বাড়ির লোক ভদ্র, পেশায় চাকরিজীবী।”
রিয়া থমকে বলল, “আমি… আমি…”
শাকিব হাত বুলিয়ে বলল, “তোমার পছন্দের ছেলেটাই তো এখানে।”
রিয়ার বাবা দূর থেকে ফোন করেন—“তুমি আমাদের কথা শুনছ না? তুমি ওর সাথে উলঙ্গ নোংরা কথা বলছ, শুনেছি কলেজে গলে পড়েছ একে অন্যের পেছনে।”
রিয়া ফোন ধরেও কান্নায় দ্বিধায় পড়ে যায়—“পিতাজী, আমি শুধু…”
বাবার গম্ভীর বানী ঢিলে আদল—“ভালোবাসা সবার আগে নয়, বিয়ের পরে সব হয়।”
রিয়া ফোন রেখে ফেলে—মৃদু হাওয়ায় মাথার চুল ছুঁয়ে দিলো একটি আলো—সেই দিন, সেই ঘ্রাণ, সেই অদ্ভুত বিপদ-বোধ—সে বুঝে গেলো, সত্যিকারের ভালোবাসা মানে কোনো ছল নেই, কোনো শর্ত নেই।
সন্ধ্যায় কলেজ মাঠের সেই বটগাছের কাছে এসে দাঁড়িয়ে রিয়া ঘোষণা করল, “আমি আর কোনো বাধা মানি না—আমার জীবনে শুধু তোমার ভালোবাসা মানে।”
শাকিব বলল, “আমি ঠিক আগের মতই তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে চাই না।”
রিয়া হঠাৎ জমে ওঠা অজানা শক্তি নিয়ে বলল, “যদি তারা না মেনে নেয় আমাদের সম্পর্ক?”
শাকিব শক্ত গলা—“তারা ভুল পথে; আমরা ভুল পথে নয় সামনের পথে হাঁটবো।”
তারা মিলে গ্রামের এক বিচক্ষণ পন্ডিতের কাছে গিয়ে যৌথ হাজিরা দিলো—পন্ডিত বললেন, “যে ভালোবাসা নিজের জীবন দিয়ে লিখতে পারে, তা কোনো সামাজিক রুলবুক ভেঙে দিতে পারে।”
পক্ষ-বিপক্ষের একমত বিনিময় হোক বা না হোক, ওই পন্ডিতের শর্ত ছিলো, ‘তোমাদের মিলনে কেউ বাধা সৃষ্টি করলে প্রেমের পুণ্য ক্ষমা দেবে না।’
দিন গড়িয়ে এলো, সিদ্ধান্ত করা হলো—দুই পরিবারের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে, এবং যদি না রাজি হন, তাহলে আইননুগ ভাবে রেজিষ্ট্রি বিয়ে করে জীবন শুরু করবে শাকিব-রিয়া।
মিটিংয়ের দিন, দুই পরিবার ক্যাঙ্গারুতেকণ্ঠে ঝাপসা উত্তেজনায় উপস্থিত হলো। একদিকে রিয়ার বাবা, অন্যদিকে শাকিবের মা। মিলিত আলোচনায় নানা অভিযোগ, নানা ভয়—“বাছি বাচ্চার কী হবে?”, “ওর পারিশ্রমিক?”, “রাজস্ব কর?”—সবার ভয়াক্ত প্রশ্নের মাঝে রিয়া কণ্ঠে সততা নিয়ে বলল, “আমরা একে অন্যকে বিশ্বাস করি, আর একে অন্যের স্বপ্ন পূরণ করতেই বেছে নিয়েছি।”
শাকিবের মা কান্নায় বললেন, “আমার ছেলেটা বুঝি ছোট খাট জীবনে পয়সাও জোটাবে না।”
শাকিব ধীরে করে বলল, “মা, ছোট দিনেই তো ভালোবাসা শিখেছিলাম—যখন আমার শক্তি কম বোঝা যেত, তখন ও ছিল পাশে।”
পরিবারগুলো আনমনা হয়ে রয়ে গেলো; একসময় রিয়ার বাবা দাঁড়িয়ে বলেন, “যদি তোমরা সত্যিই একসঙ্গে সুখী হতে পারো, তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই।”
শাকিব-রিয়া একসঙ্গে কণ্ঠে বলল, “ধন্যবাদ, বাবা।”
সেই দিন থেকে, তারা বিয়ের পর প্রথম রাতে হাতেকলমে রান্না করে রইল ছোট্ট মেহমানখানায়; একসঙ্গে ককটেল চা সিপ করে নতুন জীবনের স্বপ্ন বুনি।
পরের প্রভাতে, রিয়া দেখল, আয়নার সামনে শাকিব নেমেপড়েছে—চোখে অতিরিক্ত আবেগ, মনে হচ্ছে কোনো অজানা প্রতিজ্ঞা ভেঙে যাওয়ার মতো। তাকে কাছে ডেকে বলল, “প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যত দিন বেঁচে আছি, তোমায় ছেড়ে যাব না।”
রিয়া হেসে, নীরবে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যতদিন তুমি পাশে থাকবে, স্বপ্নগুলোকে ছেড়ে যাব না।”
তাদের ভালোবাসার পরাবাস্তব রেখা সেই রাত্রি ভেঙে গেল, আর দেখা দিলো এক নতুন দিনের সূর্য—যেখানে আর কোনো বাধা নেই, আর কোনো ভয় নেই, শুধু বিশ্বাস আর ভালোবাসার অটল অনন্ত সেতু।