অন্তরের আলোকচ্ছটা - Bengali Choti Golpo

Soumya
0

কলেজের প্রথম পরিচয় থেকে শুরু করে পাঁচ বছরের স্মৃতি-বাঁধন, কল্যাণি শহর জুড়ে ডালপালা-চোখে অপেক্ষা, দুই শহরের দূরত্ব এবং কাজের চাপের মধ্যেও আদি ও তন্ময় তুলে নেয় এক অন্তরঙ্গ সেতু, যেখানে ভালোবাসা প্রত্যেক মুহূর্তেই পুনঃজাগ্রত হয়।

অন্তরের আলোকচ্ছটা

মেঠোপথের ধুলোমাখা বিকেলে আলো-ছায়ার খেলায় ভেসে উঠছিল অদ্ভুত এক নিষ্প্রাণ নীরবতা। এ পথ দিয়ে অল্পেই চলাফেরা করত আদি। মাথায় ইয়ারফোন, কাঁধে হালকা ব্যাগ; তবে আজ সে ইয়ারফোন টেনে নামিয়ে এনে রেখেছিল—মনের খোঁজে তিনি কয়েকদিন ধরে এক অজানা ঘুমচোখ অবস্থা অনুভব করছেন। ব্যস্ত শহরের এই নিউরড্‌-ব্লক দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি অনুভব করলেন, প্রত্যুষের নীরব উদাসীনতা যেন এই পুরোনো রাস্তা, পুরোনো স্মৃতি, পুরোনো আশা ধীরে ধীরে জাগিয়ে তুলবে।

আদির চিন্তা শুধু নিজের নয়; তার জীবন-বৃত্তান্তের পেছনে লুকিয়ে আছে তন্ময়। পাঁচ বছর আগে একটি দুর্ঘটনা—ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের চৌকাঠে পরিচয়, রৌদ্রোজ্জ্বল হাসি, কোনোরকম ভরসা না পেলেই নামিয়ে ফেলল এক ঝটিকা আত্মার সকল ভরসা। তন্ময় তখন ভর্তি ছিল আপাতদৃষ্টিতে সফল কোনও কোম্পানিতে; কিন্তু আদি বুঝতে পারেনি—ভেতরে ভেতরে সে তখন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। একদিন আদি তার গুদাম-ঘর মতো বয়ে চলা জীবনের পাইপলাইন ভেঙে খুঁজে পেলেন আরেক মানুষের—তন্ময়ের—ঘাটে মাথা দিয়ে খুঁচিয়ে থাকা ক্ষতের মতো, ঠিক যেন কেউ তাকে বুঝি সুধু নিজেই ভাঙতে চান তবুও বন্ধন ভাঙছিল না।

তন্ময়ের চোখে প্রথম উদ্ভাসিত হয়েছিল এক নিঃশব্দ আকাঙ্ক্ষা, যা আদি বুঝতে পারে নি। প্রথম দিনের ঝাঁপ দিয়ে ছেড়ে আসা সে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ফিরে এসে দারুণ এক চঞ্চলতা নিয়ে বলেছিল, “আমি তোমাকে বুঝতে চাই।” আদি অস্থির হয়েছিল, কারণ ভালোবাসার নাম আগে কখনো শুনেনি সে। সেজন্য সে সরিয়ে দিত মাথা, চাইতো নিজেকে নিঃশব্দ কিছু দিয়ে ঘিরে রাখতে, যেন চুম্বকীয় একটি আকর্ষণে ঝরঝরে হতে দেবে না নিজের আকাশ।

তখন তন্ময় হেসে বলেছিল, “আমি অপেক্ষা করতে পারি, যতক্ষণ লাগবে।”
ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা নিয়ে আদি মুখ ঝিম্‌মি হয়ে বলেছিল, “আমি অপেক্ষায় ভেঙে পড়তে চাই না।”

সেই ছোটখাট কথা-দ্বয় আজ দুজনের মধ্যে একটি মহাদেশ যখন অতিক্রম করে ভেসে আসে—মনটা চুমুকে নীলাভ হওয়ার আগে তার প্রতিফলন আজও স্পষ্ট।


আদি বাড়ি ফিরল সন্ধ্যায়; মায়াবী আকাশে আস্ত পরার মতো চাঁদের আলোর এক নিঃশব্দ সোঁদা তার জানালা ছুঁয়ে গেল। সে জানালা খুলে বসল, প্রয়োজন ছিল কিছু কণ্ঠস্বর শুনতে—নিজেকে ফের জীবিত করতে। উড়িয়ে দিল মেঝেতে ফেলে রাখা পুরনো ডায়েরি; পাতাগুলোর জালের মতো ছোপ ছোপ দাগে ছড়িয়ে ছিল তন্ময়ের লেখা—“যে হৃদয় অন্য কারো জন্য জ্বলে, তার আগুন কারো নামে নষ্ট হয় না।”

পাতায় পাতায় স্পষ্ট হল তন্ময়ের আমন্ত্রণ—সে চেয়েছিল আদি যেন তার অন্তরোজ্জ্বল বেদনা খুলে ফেলে। আদি কয়েকটি ডায়েরি পাতার ওপর উঁকি দিয়ে বুঝতে পারল, প্রতিটা শব্দে আছে এক অস্থির তীব্র আকুলতা, যা তাকে উজ্জীবিত করেছে—যদিও সে মানতে চাইছিল না।

দীর্ঘ কয়েক দিন আদি নিজেকে উঁচুতে তুলে রাখল, কাজ আর কাজ—ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে ডিজাইন মডিউল কমপাইল করতে করতে রাত কাটাল, কোনো এক কেন্দ্রীয় পৃথক বৃত্তান্ত তৈরি করল। তন্ময়ও ব্যস্ত; তবে সে মাঝে মাঝে ফোন করত—ভোরের রিমাইন্ডার, দুপুরের অদ্ভুত জিজ্ঞাসা, সন্ধ্যার হালকা কথোপকথন।

একটা বিকেলে হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল—আদি হাত ধরে রুমের ভিতরে দৌড়ে গিয়ে রিমুভ করে নিল। তন্ময়ের কণ্ঠে ভেসে এল, “আজ সন্ধ্যায়… দেখা করব?”

আদি কণ্ঠে একটু লজ্জা মিশে বলল, “কোথায়?”
“যেখানেই… অরিন্দম পার্ক, পিকনিক বেঞ্চ ৫।”

আদি কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল; উদাস ভাবনায় ভেসে এলো—“কারো জন্য অপেক্ষা করা কি অন্যায়?”
তবুও সে নির্দিষ্ট সময়ে সেদিকেই রওনা দিল, সে রাতে হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন বাজছিল এক অদ্ভুত তালে এবং চাঁদের আলো যেন যান্ত্রিক নয়, প্রকৃত ছিল।


অরিন্দম পার্ক ছোট্ট, বেশ পরিচ্ছন্ন। বেঞ্চ সমূহ যেন মিথ্যাবাদী দূরত্বের গল্প শোনাত। তন্ময় সেখানে আগেই বসে অপেক্ষা করছিল—চোখে ছিল বিরামহীন এক আবেগের জোয়ার। আদি আসতেই সে হেসে উঠল, “তোমার ছাড়া বেঞ্চগুলো শুনছিল, আজ বুঝি শান্ত হয়ে আছে।”

আদি ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি এলো, “তুমি যে এই ধরনের কথাও বলো!”
“কথা কি নয়, আমার অনুভূতিই মূল কথা।”

তন্ময়ের সেই কথা আদি’র অন্তর ছুঁয়ে গেল; ভেতরে ভেতরে সঠিক সমন্বয় খুঁজতে লাগল—“তোমার অনুভূতি কি সত্যি?”

তন্ময় সরল চোখে তাকিয়ে বলল, “ভালোবাসা সত্যিই—যে অনুভূতিতে নিজেকে ভুলে যেতে হয়।”

শব্দগুলো এলো যেন হালকা ভাস্কর্যের মর্মস্পর্শী ছোয়াপড়া। আদি মনের দরজাগুলো চেপে ধরে ভাবল, “কী করলে নিজেকে সবচেয়ে নিরাপদ মনে হয়?” সে তখন অনুভব করল, তন্ময়ের স্পর্শেই যেন এক অদ্ভুত সান্ত্বনা, যা কোনো কৌশল নয়, স্বাভাবিকই তার ভেতর ভেসে উঠছে।

তারা বেঞ্চে বসে অনেকক্ষণ কিছুই করেনি—শুধু চোখে চোখ রেখে ছিল। অটোমেটিক হৃদয়ের লয়, শরীরের প্রতিটি স্পন্দন, বাতাসের স্নিগ্ধতা—এগুলো দিয়েই হয়তো ভালোবাসার নিবিড় যোগাযোগ। আদি মনে মনে ভাবল, “এই মুহূর্ত বাদে অন্যকিছু চাই না।”

হঠাৎ শুনতে পেল পকেট ফোনের নটিফিকেশন—কাজের কোনও শর্টমেইল। আদি আহতুড়ে লাফিয়ে উঠে ফোন খুলছিল, কিন্তু তন্ময় হাত দিয়ে ফোনটা বন্ধ করে বলল, “এই রাতের জন্য অন্তর নিখোঁজ রেখো, আমি আছি।”

আদি হকচকিয়ে তাকিয়ে রইল, তারপর মৃদু হাসি দিয়ে স্মার্টফোন পকেটে ফিরিয়ে দিল। সেই ছোটখাট সাহসিকতার মুহূর্তে সে উপলব্ধি করল, অর্থবহ ভালোবাসার জন্য একে অপরের জন্য নিজেকে ছেড়ে দিতেই হয়—কাজ, দায়িত্ব, সকল ভার এক মিনিটের জন্য ছেড়ে যে শুধু অনুভবের রাজ্যে যায়।


বিকেলের নিচু আলো অনেক মুহূর্তে অন্ধকারে মিশে গেল, তারা সিদ্ধান্ত নিল কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে এক সিক্রেট ক্যাফে খুঁজে বেড়াবে। সেখান ঢোকার পর হালকা সঙ্গীত, ম্লান বাতি আর পুরোনো বইয়ের পাতা ছুঁয়ে দিয়ে গড়ে উঠল এক অন্তরঙ্গ অবস্থা।

কাঠের টেবিল ছুঁতে গিয়ে আদি মনে মনে ভাবলো—“কেমন যেন শান্তি।” তারপর তাকিয়ে দেখল তন্ময় একটি পুস্তক খুলে বসেছে, ধারণা করল সেটা ‘অনুশোচনা মন্থন’। তন্ময় কাছে এনে বলল, “তোমার জন্য লিখেছি কিছু শব্দ।”

আদি পুস্তক খুলে পড়ল:
“প্রতিটি বিকেলের পর সূর্যের স্বপ্ন তখনো গলে যায় না, তুমি যখন আমার কাছে দাড়িয়ে থাকো, আমার সমস্ত সন্ধেয় মধুময় হয়ে ওঠে।”

আদি চোখে পানি নিয়ে বলল, “এগুলো তোমার কথা?”
“সব,” তন্ময় বলল, “আর একটু বেশি।”

আদি মৃদু গায়ে হাত বুলিয়ে বলল, “তবে কি তুমি বুঝতে পারো, আমি কখনো স্বপ্ন দেখতাম না?”
“তুমি ছিলে স্বপ্নের হাঁক, শুধুমাত্র অপেক্ষার আগুন।”

তখন আদি বুঝতে পারল, তন্ময় তার নীরবতা চেনে, তার দুঃখ জানে, আর সেই কারণেই সে ভালোবাসার স্বীকৃতি পেয়েছে—না যুক্তিতে, বরং অনুভূতির অটল নেকড়ে বাঁচা সাহসিকতায়।


পরের সপ্তাহে অফিস লাইফ ফের স্থির হলো। আদি প্রতিদিন সকালে গাড়িতে উঠে সদ্য ফিল্টার করা কফি নিয়ে আসতো, তন্ময় অফিসে গিয়ে পকেটে রেখে দিত এক প্যাকেট বায়ু-স্নিগ্ধ ক্যান্ডি। দিনের ক্লান্তিতে এক আড়ম্বরহীন মিষ্টান্ন বদলে দিত দু’জনের মন।

তেমন এক সন্ধ্যায় হঠাৎ অফিস ম্যানেজারের নির্দেশ—‘আগামীকাল সকালে দায়িত্বে যেতে হবে দিল্লী ব্রাঞ্চে।’ তন্ময় স্তব্ধ হয়ে শুনল, কারণ পাঁচ বছরের জন্য স্থায়ী বদলি। আদি মনের অচেনা দাঙ্গা শুরু হয়ে গেল—“এবার কী হবে আমাদের?” সে ফোন করে তন্ময়কে কাঁদতে ভেঙে পড়ল।

তন্ময় রেখে দোলা ভঙ্গিতে বলল, “দূরত্ব গেলেই প্রেমের পরীক্ষা শুরু হয়।”
আদি সরে যেতে চাইল, “আমার শরীর যদি নিঃশেষ হয়ে যায়?”
“তোমার ভালোবাসা নিঃশেষ হবার নয়, তুমি দেখবে, মন মানুষের পাখা হয়ে উড়ে ফিরে আসে।”

যেদিন তন্ময় দিল্লীতে চলে গেল, আদি অফিসের সবাই ভাবল সে কেন প্রথম দিনেই দুঃখে মাথা নিচু করে বসল। সে অনুভব করল, লিফটের প্রতিটি দাঁত ভেঙে পড়ছে, বুকের ভিতর একটা শুন্যকুপ তৈরি হচ্ছে। ঘরে ফিরে সে লিখল ডায়েরিতে:
“আমি হৃদয়ের প্রতি পলকে তোমাকে খুঁজছি। কোথাও তোমার ছায়া নেই; কৌতুহল আর বিষণ্ণতা আমার নাভি স্পর্শ করছে।”

ভর কাঁদল আদি। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্য দেখে আন্দোলিত হৃৎকণ্ঠে সে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকল, কল বাতিল হলো না, কিন্তু কথাবার্তা কেবল একপাশে।

একদিন অন্ধকারে, সাইকেলে করে সে কলকাতা থেকে নিউ টাউন আসলো; উত্তেজনা আর আশার মিশ্রণে তার শরীর দুলছিল। কারণ ছিল সংবাদ—‘দু’দিনের জন্য দিল্লী থেকে আসছি আমি।’

রাত্রি বারোটার ট্রেনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আদি অজান্তে কেঁদে ফেলল। প্রতিটি ট্রেনের আওয়াজ যেন ভেঙে দিচ্ছিল তার আবেগের বাঁধ। তখন হঠাৎ প্ল্যাটফর্মের শেষ কোণে দেখা গেল তন্ময়কে। দু’জনের দেহ ছেড়ে এলো এক অদ্ভুত শুষ্ক সুর—খালি হাতে দু’জনে ঝাঁপিয়ে ধরে নিল।

তন্ময় কণ্ঠে আকুল হয়ে বলল, “আমার সকাল-সন্ধ্যা তোমার অপেক্ষা ছাড়া অর্থহীন ছিল।”
আদি কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমি ভয় পেয়েছিলাম… তুমি ফিরে আসবে না।”
“আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম—যেখানে ভালোবাসা, সেখানে অনাবৃত দেয়াল নেই।”

সেই রাত্রি তারা কলকাতার এক ছাদে উঠে দাঁড়ালো। দূরে অবিকল আলোর টিমটিমানি, ঘরবন্দী শহর যেমন নিঃসঙ্গ, তেমনি তারা নিজেদের মধ্যে একটি নিজস্ব জ্যোৎস্নার গহ্বর খুঁজে পেল। তন্ময় আদি’কে কোলছানিতে নিয়ে বলল, “বিশ্বাস করো—আমাদের ভালোবাসা সময়ের গণ্ডি অতিক্রম করবে।”

আদি মাথা ঠোঁটে রাখল, “আমার হৃদয় তো নিরব।”
তন্ময় চুমু খেতে খেল, “তাই তো ভালোবাসার শব্দ লাগে না—অনুভূতি নিজেই ভাষা।”


পরের দিন থেকে তারা একসাথে দিল্লী-কলকাতা যাতায়াত শুরু করল। প্রতিটি সফর হয়ে উঠল এক ধরনের অন্তর্দর্শন—কীভাবে সঙ্গীকে অগ্রাহ্য না করে কাজের চাপ সামলানো যায়, কীভাবে প্রতিটি মূহূর্তে অনুভূতির স্রোত বজায় রাখা সম্ভব।

এক বিকেল আদি দিল্লীতে বসে একটি সেমিনার শেষ করেছিল, ক্লাসরুমের মাঝখানে সিঁদুর-লাল আলোর আভা অনুভব করল, যেন তন্ময় এসে দাঁড়িয়েছে দরজায়। সে ফোন খুলতেই তন্ময়ের ছবি—হাত জোড় করে ক্যাপেিয়নে পাঠিয়েছে, “তোমার হাসিই আমার শান্তি।”

সে হাসল; আকাশ পূর্ণ ভর দিয়ে গেল।

তন্ময়ও কলকাতা ফিরতেছে; আর আজই তাদের একেবারে নতুন আবাসে স্থানান্তরণ—দুটি শহর নয়, বরং তাদের হৃদয়ের দুই কোণে ঠাঁই নেবে এক স্বপ্নীল বীজ।


দীর্ঘ কয়েক মাসের পর, চলছে শীতে; কলকাতার ঠাণ্ডা হাওয়া তন্ময় আর আদি দুইজনকেই কাছে টেনে ধরে। তারা একসঙ্গে নিজস্ব একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়েছে—ছোট্ট, তবে আলোয় ভরা এক বিরান কোণে। এ কোণে আছে বড় জানালা, বাইরের সিঁড়ি দিয়ে ওঠা এক ফুটবল মাঠের আলো, আর মাঝখানে তাদের অমলাল অনুভূতি।

এক সন্ধ্যে, আদি রান্না করছিল, তন্ময় চমৎকারভাবে বাটার-গার্লিক রুটি সেঁকছিল। গোটা রান্নাঘর উন্মুক্ত আকাশের মতো প্রশস্ত। আদি হঠাৎ চুমু খেল, “খেতে আসো।”
তন্ময় ব্যস্ত রুটির ওপর চোখ রেখে বলল, “এভাবেই ভালোবাসা খেতে পারি।”

তারপর আদি নীরবে ভাবল, “কত কিছু বদলায়, কিন্তু কী কী অটল!” সে কাঁধে হাত রাখল, “তুমি বদলাওনি।”
“আমি নিজেকে সেভাবেই রেখেছি, যাতে তুমি আমাকে চিনতে পারো।”

তারা সেদিন রাত আর যতই কেউ বোঝার চেষ্টা করুক না কেন, তাদের ভালোবাসা নিজস্ব এক আবেগীয় লয় বজায় রাখল—কাজের চাপ ওয়াই-ফাই তুলে দেয় না, তবুও অনুভূতির সংযোগ অটুট।


মাসদিনের পর আদি কিছুটা আতঙ্কে বলল, “আমার বাবা-মা আসছে দেখা করতে।”
তন্ময় হেসে বলল, “আমি প্রস্তুত।”

আদির মনে হলো, “এবার হয়তো সব ষড়যন্ত্র শেষ।”

সেই সপ্তাহে বাবা-মা কলকাতা এল—বুঝতে পারল দুজনের মধ্যে এক নিশ্চয়তা, এক শান্তি, যা কোনও চাকরি বা ব্যাচেলর লাইফ তার ভেতর এনে দিতে পারেনি। দেখা হলো খাটিয়ে-চোলাই মিটিংয়ে; প্রথমে তাঁর পিতার অবিশ্বাস, মায়ের সরগরম চোখ।

কিন্তু যখন পা রেখে দেখল, তন্ময় যত মিশুক, আদি তার ঘাড়ে হাত রেখে বলল, “বাবা, আমি অনেক পরিবর্তন করেছি তাঁর ভালোবাসায়।”

পরে বুঝলেন, ভালোবাসার মাঝে যদি আন্তরিকতা থাকে, কতটা বাধাও থাকুক, শেষ পর্যন্ত পতিত ভাবনা মুছে যাবে।


এক বছর পর, তাদের বিবাহোত্তর জীবন এক নতুন মোড়ে—কলেজের সেই গোধুলি জন্মানোর স্মৃতিস্তম্ভ থেকেও যেন আলাদা। আদি ও তন্ময়ের চোখে আজ আত্মার পরিত্রাণের আলো, মতিচুর প্রতীক্ষা আর এক অভিন্ন সমর্পণ।

তারা যে ভালবাসা বোনাস লাইন দিয়ে জীবনের ফাইল মডিফাই করে গড়েছে, তা আর কোনো দূরত্ব, কোনো বাধা ভাঙতে পারেনি।

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)