অন্তরঙ্গ রাতে নিঝুম ঘরে বিছানায় শুয়ে রিয়া আর তন্ময় এক মৃদু নীরব আবেশে মিশে যায়—শব্দহীন ভালোবাসার স্পন্দনে কেটে যায় নিশিকে, যেখানে প্রত্যেকটা স্পর্শ দান করে অন্তরের গভীর বিষণ্ণতা ভুলে যাওয়ার নিরব আনন্দ।
নিস্তব্ধ নিশির মর্মস্পন্দন” – এক Bangla Choti Golpo যেখানে রিয়া ও তন্ময় গভীর নিশির নিঃশব্দে একে অপরের মিলনতরঙ্গে ভাসে, স্পর্শের সুরে স্মৃতিটা একান্তকালীন আর আবেগের অমলিত সেতু ঘরোয় করে।
গল্পের নাম: “নিস্তব্ধ নিশির মর্মস্পন্দন”
রাত্রি নেমেছে গভীর নিঝুমতার মোড়কে, বস্তুগত সব শব্দ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে নীরবতার কোলে। নিশাতি জানালার ফাঁক দিয়ে আসছে নরম বাতাস; ভিজে আকাশে উল্কাপাতার রূপকথার মতো জ্বলজ্বল করছে তারা—এ যেন একান্তকারে আশার মশাল জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ঘরে আলো ম্লান; জানলার পাশে পাড়া হালকা মোড়ানো শাদ্দাম তাঁবু, আর বিছানার মসৃণ সাদা চাদরের মাঝেই শুইয়ে রাখা আছে রিয়া।
প্রাণবন্ত দিনের কর্মব্যস্ততা ভেঙে একমাত্র এই রাতে সে নিজেকে খুঁজে পায়, তন্ময়ের উষ্ণ স্পর্শে। তন্ময়, দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের পর প্রেমিকা থেকে হয়ে উঠা অন্তরঙ্গ যাত্রী, আজ রাতের নীরবতায় রিয়ার দিকে এগিয়ে এসেছে। তার চুলগুলো ভিজে আছে সামান্য ঘামের ঝিলিক আর ভোরের সংক্ষিপ্ত স্বপ্নের আভাসে; চোখে আছে এক অরূপ নীরব আকাঙ্ক্ষা।
রিয়া চোখ খুলতেই প্রথম দেখল তন্ময়, অন্ধকারে চোখের পাতা খুলে, তার মুখের প্রতিটি রেখা আলোকিত করার চেষ্টা করছে। অশ্রুস্নিগ্ধ চাঁদনী হালকা করে তুলে দিচ্ছে তাদের ছন্ধবদ্ধ নিঃশ্বাস। রিয়া আঙুল তুলে ছুঁয়ে দেখতে চায়—কেমন করে তার স্নেহময় স্পর্শে তার অবুঝ হৃদয়টা নীরব নন্দনের দ্বারে আছড়ে পড়েছিল।
তন্ময় বোঝে, রিয়া আজ অতটা আলগা নয়; তার একই সঙ্গে রয়েছে এক প্রশ্ন: “এবার কী হবে?” তাই সে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে বিছানার ধারের পাশে, হাতে এক কুঁচো করে রাখা তার প্রিয় বই—প্লাবনের কবিতা।
“আমি আজ রাতে কিছু বলতে চাই,” কম্পিত কণ্ঠে ফিসফিস করে তন্ময়।
রিয়া ঘুম-বিনির্মল চোখে তাকিয়ে মৃদু করে হাসে, “কথা বলো… আমি শোনার অপেক্ষায় আছি।”
তন্ময় ধীরে ধীরে বিছানার পাশে বসে নেয়, হাত বাড়িয়ে তার চুল থেকে ভিজে ছোট্ট ফোঁটা-আবেগ তুলে নিতে চাই। সে বলে উঠল, “প্রথমেই বলতে চাই, তোমায় ছাড়া আমার নিশি বেদনাহীন নয়।”
রিয়া শিউরে ওঠে; দু’টি স্পন্দিত হৃদয় এক হয়ে উঠেছে এক অদৃশ্য তালে। সে নার্ভাসলি বলে, “ওই প্রথম দিন থেকেই তুমি আমার দিন-রাত্রি চুরি করে ফেলেছিলে—কখনো টেক্সটে, কখনো ফোনে।” তার কণ্ঠে আছে হাসি আর প্রায় অশ্রু মিলিত এক অদ্ভুত কোমলতা।
তন্ময় নীরবে কাঁধে হাত রেখে বলে, “আমি চেয়েছিলাম তোমার সমগ্র নিশি-যাত্রা আমি করব।”
রিয়া হেসে মাথা কাত করে, “আমার মনের ভেতর অনেক দরজা ছিল, লক ছিল, কিন্তু তুমি সেই চাবিকাঠি হয়ে এসেছিলে।”
ওই মুহূর্তে তন্ময় মৃদু করে কেটে আনে কবিতার এক couplet—
“প্রিয়তমা, তোমার নিষ্প্রভ নিশাসম ধরা,
আমার নিঃশ্বাসে জাগ্রত তুমি, আবেগের গথায় লেখা।”
রিয়া আঙুল উঁচিয়ে সেই couplet গায়ে রাখে, চোখে জল জমে ওঠে। সে ফিসফিস করে বলে, “কবিতা লেখার নেশা আছে তোমার, কিন্তু আজ রাতে আমি একটা অন্য কবিতা চাই—একটা অনুভূতির কবিতা, আমাদের অন্তরের ভাষা।”
তন্ময় হেসে বিছানার নিচে রাখা তোলা বালিশ তুলে আনে, আর সেই বালিশ ভেতর লুকিয়ে থাকা নরম লেপ দিয়ে করে দেয় ঘুমিয়ে যাওয়ার মতো আরাম। তারপরে সে নিজে উঠে আসে, নরমভাবে বসে যায় রিয়ার পেছনে, ভিজে চুলটা গলায় পড়তে দিয়ে বলে, “এই রাতটা আমার, আমার হাতটাই তোমার রাখবে।”
রিয়া অবাক, চোখ বুজে ছুঁয়ে নেয় তন্ময়ের কাঁধ—সে অনুভব করে, কী উদাসীন শান্তি ভেঙে দিচ্ছে তার দেহ। সর্ব বিষণ্ণতার পথ অতিক্রম করে রিয়া জানতে পারে, ভালোবাসা কখনো শব্দহীন নয়; এ হলো স্পর্শের কবিতা।
তন্ময় উঠে আসে তার গায়ে, চন্দ্রকিরণ গায়ে পড়তেই বসে যায় রিয়ার বুকের ওপরে। তাদের নিঃশ্বাস মিলেমিশে এক চ্যাপ্টা আওয়াজ সৃষ্টি করে—একটি সুরের রাগিণী, যেটা শুধুই তাদের। তন্ময় ধীরে ধীরে হেসে বলে, “তুমি কি জানো, আমি তোমাকে প্রথম দেখেই বুঝেছিলাম—তুমি আমার নিঃশব্দ আকাশ।”
রিয়া মৃদু করে মাথা কাত করে বলে, “তবে আমার প্রবল অনিশ্চয়তা কবে ভাঙলো?”
তন্ময় চোখে চোখ রেখে স্পর্শ করে, “যখন তুমি প্রথম স্পর্শ করেছিলে আমার হোঁচটে থাকা বিষাদ।”
রিয়া অনুভব করে, সে ভালোবাসার জন্য জন্মা—একটি সুখানুভূতির জন্য, যে সুখের মর্মে মানুষ নিজের সমস্ত অব্যক্ত কষ্ট শিখে নিবে।
তারপর তন্ময় ধীরে করে রিয়ার গাল থেকে চুমু নেয়। চুমুটি মৃদু, গভীর—যেন অন্তরের বেদনার উপর আঘাতের মতো মধুর। আবেগের স্পন্দন জাগ্রত করে দেয় রিয়ার দেহে। সে স্বরে কাঁপতে কাঁপতে বলে, “আমি চাই তোমাকে এত নড়বড়ে ছেড়ে যাব না—শুধু এই বিছানাতেই।”
তন্ময় আরেকটু কাছে বসে, দু’জনের শরীর এক-ক্ষণের জন্যে মিশে যায় অপরের অতলে। সে বলে, “আমি আজ তোমাকে বলতে চাই, আমার জীবনের প্রতিটি নিশি-যাত্রা শুধুমাত্র তোমাকে খুঁজে ফেরে।”
রিয়া পলক ঝাপটে বিরতে চায়, তার ভেতর এক অনাবিল ভালোলাগা দানা বাঁধে, “তখন… আমাদের ভবিষ্যত?”
“ভবিষ্যত,” তন্ময় বলে, “এ তো আজ রাতেই। প্রতিটি নিশিকাপ অতিক্রম করে, আমাদের ভালোবাসা সুধা হয়ে দগ্ধ হবে।”
রিয়া স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে কবাডোলে স্নিগ্ধ সাদা চাদরের যে অংশ—সেখানে হেসে নিজেকে ঢেকে নেয়, “তুমি এখানে থাকো। তুমি প্রতিটি নিশি-যাত্রা আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, আমি অদৃশ্য অন্তরঘাতের বিরুদ্ধে।”
রাতটা আরও ঘন হয়ে আসে, তাদের নিঃশ্বাস ভারী, প্রতিটা স্পর্শ গভীরে ঢুকে মনকে নাড়া দেয়। তন্ময় তার হাত বুকে নিয়ে বলে, “আমার হৃদয়ে গোপন যে বিচ্ছিরি বেদনা ছিল, আজ তোমার হাসি তা মুছে দেয়।”
রিয়া আবেগে বলে, “আমি যে কোনো বেদনার সাথেই তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই না।”
এই অনুভূতির একনিষ্ঠতায়, তারা একে অপরের হৃৎপিণ্ডের গহ্বরে প্রবেশ করে—কেননা ভালোবাসা কেবল শব্দের নয়, স্পর্শের এবং গভীর আবেগের সমাহার। তারা শরীরের ভাষায় আদান-প্রদান করে—কীভাবে ভরপুর ভালোলাগা দিয়ে একে অন্যকে পুনর্জীবিত করে, অনুভবের প্রতিটি স্তরে সহিংস বেদনা মুছে দেয়।
রিয়া চোখ মুড়ে অনুভব করে, তার ভেতর দীর্ঘদিনের বিষণ্ণতা যেন ওলটপালট হয়ে গেছে। আর তন্ময়ের বুকে ভর করে সে শোনে তার নিজের হৃদয়ের হালকা বিশ্বস্ত ধাড়া—যা ভালোবাসার অনবদ্য রাগিণী বাজাচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ ঝিম্-মিরতি শেষে, রিয়া ছিঁড়ে ফেলে মনখোলা সব আবরণ—সে আদরের তুলোর মতো নরম চাদরের ওপর ভর করে বলে, “আজ রাতে আমি সবচেয়ে নরম, সবচেয়ে সত্য।”
তন্ময় কণ্ঠে উষ্ণতা নিয়ে ফিসফিস করে, “আর তুমি আমার সবচেয়ে অমলিন সত্য।”
তারা আবার নীরবতা ভেঙে দেয়—কোনো শব্দ নয়, শুধুই নিঃশ্বাসের স্পন্দন, বাতাসে ভাসিয়ে দেয় এক অপূর্ব রঙের মনের কথা; আলো-ছায়া মিশিয়ে তৈরি করে মর্মান্তিক এক অভ্যুদয়। রাত যত এগোয়, তারা প্রত্যক্ষ করে দেখতে কীভাবে নিঃশব্দ প্রেমের রেডিয়েশন একে অপরের ঘ্রাণ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
হালকা আয়নার ধারে রিয়া উঠে দাঁড়ায়, ঘ্রাণ মাখা চাদরে তন্ময়কে ডাকে। তন্ময় ধীরে আঁচড়েনি—একটু দেহ ঢেলে দেয় আয়নার সামনে, দু’জনেই কুঁজো হয়ে একে অপরেরই অন্দলে থাকে। তারা সেখানে খুঁজে পায় পৃথিবীর সমস্ত আকাশ, প্রেমের সেই অন্তহীন ক্ষেত, যেখানে রাতের নীরবতা নিজেই ভাষায় পরিণত হয়।
আয়নায় তাদের কাছে আসে এক-আধ ভাঙা প্রতিচ্ছবি—যা বলে, “ভালবাসা কোন ছবি নয়, বরং অনুভূতির পরিধি।” তারা জানে, তাদের ঐন্দ্রজালিক আবেশ একে অপরের অতল রহস্য উন্মোচন করেছে—কেননা অযৌক্তিক সব প্রশ্নের উত্তর ঢেউ হয়ে আসে চারদিক থেকে।
রাত যখন গড়িয়ে মৃদু হয়, তারা হালকা করে বিছানা ছেড়ে উঠে বসে জানালার ফাঁকে আকাশের দিকে তাকায়। দূর দিগন্তে আজ সূর্য ডোবার মতো জ্বলজ্বল করে; তারা জানে, এই নিশির প্রেমের পরাবাস্তবতা সামনে দিব্রদিনেও অক্ষয় থাকবে—যখন ভালোবাসার অন্তর্দৃষ্টি অর্থহীন শব্দ দূরে সরিয়ে দেবে।
পৃথিবীতে অনেক গল্প আছে, কিন্তু তাদের এই বিছানার গল্পটি অন্যরকম—এখানে আছে নীরবতা, আছে বিষাদের ব্যথা, আছে পুনর্জন্মের উদ্দীপনা। তারা জানে, আসন্ন দিনগুলোতে কাজের প্রবল দৈন্যতা, পরিবেশের অভিজ্ঞতা, সমাজের বাধা—সবই থাকবে; কিন্তু আজ রাতের এই গভীর নিঃশব্দ নদী তাদের হৃদয়কে বয়ে নিয়ে গেছে এক অভ্যুত্থানমুখী অনুভবের মাঝে।
রিয়া মাথা রাখে তন্ময়ের কাঁধে, আর তন্ময় আলতো করে চুমু খায় তার ভ্রু-সন্ধিতে। মৃদু করে সে বলে, “যেখানে ভালোবাসা, সেখানে দূরত্বের কোনো ধার নাই।”
রিয়া হেসে বলে, “এখন আমি জানি, নিঃশব্দতা কখনো একলা নয়।”
তাদের ওড়না উড়ে যায় চরম স্পন্দনে—রাত্রির বিপুল নীরবতার মাঝেই ফুটে ওঠে একটি অন্তরাঙমঙ্গল, যা তাদের পৃথক পৃথক জীবনের মিলনমঞ্চে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।