মেঘলা রাতের অন্তরবান - Bangla Choti Golpo

Soumya
0

কলেজের আবির্ভাব থেকে দুই বছরের দূরত্ব, বদলি বদল, পিতৃনিয়োগ-ভেঙে যাওয়া প্রতিশ্রুতি এবং অবশেষে এক মেঘলা রাতে ভারী বৃষ্টিতে ফিরে আসা—সাইনি আর অর্ণবের গভীর আবেগমাখা মিলনের Bangla Choti Golpo, যেখানে স্পর্শ আর নীরব চুমুতেই জাগে অমলিন বিশ্বাস।

“মেঘলা রাতের অন্তরবান” – এক Bangla Choti Golpo, যেখানে কলেজের প্রেম ছিলো অমলিন; আজকের মেঘলা বৃস্টি-রাতে ফিরে আসে সাইনি আর অর্ণবের অন্তর্বাস্বর মিলন, হৃদয়ের গহীনে লেখে এক অমৃত অনুভূতির গল্প।

গল্পের নাম: “মেঘলা রাতের অন্তরবান”

শহরের আলো শীতের নীরবতা ভেদ করে লাগামছাড়া ঝলমলে, কিন্তু অর্ণবের মন তখন অবিন্যস্ত এক অন্তর্বাস্বর স্রোতে ভেসে যাচ্ছিল। কদিন ধরেই সে শহরের ব্যস্ততা আর কাজের তুচ্ছ যন্ত্রণা পিঠে নিয়ে রেখে এসেছে অফিসের হাই-রাইজ উইং এপার্টমেন্টে; আর আজ সন্ধ্যায়ই তার প্রায় দুই বছরের দূরত্ব কাটিয়ে একমাত্র মিলন হত—সাইনি।

সাইনি ছিল অর্ণবের কলেজের প্রেম; পাঁচ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মেঘলা বিকেলে প্রথম দেখার মুহূর্তে অচেতন মনে দিলো হৃদয়ের সিপাহীকে সেই ছোট্ট সাড়া: “এই মেয়েটা আমার”। অর্ণবের সমস্ত প্রকৌশল চিন্তা-ভেবে বৃষ্টির পান্নার মতো ঝলমল করলেও সাইনি ছিলো দু’জনের অজানা ফাঁকে ফাঁকে অঝোর ভালোবাসা লুকিয়ে রাখা কোন এক গহীন কোণে।

তারা বিচ্ছেদ করেছিলো—নিয়তির খেলা, পিতৃনিয়োগ বদলি, অপ্রত্যাশিত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ—সব মিলিয়ে দুই শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল তাদের ভালোবাসা। কিন্তু আজ, ডিসেম্বরের ওই মেঘলা সন্ধ্যায়, রোদ না থাকলেও আকাশের ঘন সবুজ মেঘগুলো অর্ণবের উদাস হৃদয়ে এক নীরব সঙ্গীত বাজাচ্ছিল।

অর্ণবের কেবিনেটের বিজুরী লাইট নিভিয়ে দিয়েই সে তাকাল জানালার কাচে—দূরের রাস্তার বাতি লাইনগুলো ফুটপাথের কলিজা কাঁপিয়ে ফেলছিল। মনে পড়ল, কলেজের দিনগুলোতে তারা একসঙ্গে বসে মৃদু আলোয় আরামদায়ক ফ্ল্যাটে মোমবাতি জ্বেলে গল্প করতো, স্বপ্ন আঁকতো, কখনো প্রেমিক-প্রেমিকা গল্পে ডুবে হত; আর তখন দূরত্ব ছিলো শূন্য।

সন্ধারমূহূর্তে দরজার ঘণ্টা বেজে উঠলো। অর্ণব একটু হাবাহুব নিয়ে খুলে দেখল—সাইনি, লম্বা চুল আঁচলে বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির জল, চোখের কোণে অস্বস্তির এক অদ্ভুত উজ্জ্বলতা।

“তোমাকে দেখেই বুঝতে পারতে পারি, এই মেঘলা রাতে বৃষ্টি তোমাকে গ্রহণ করেছে,” অর্ণব মৃদু গলায় বলল।

সাইনি হেসে বলল, “এখনো পড়ে আছে তোমার গলা… আমার নাম উচ্চারণ করতে তোমার সেই দোল নীরবতা।”

দু’জনের হৃদয়–যেরকম সচল থাকতো কলেজের দিনগুলোতে—আজ ওতপ্রোতভাবে স্পন্দিত হতে লাগল।

একাকী ফ্ল্যাটের লিভিং রুমে ঢুকে ঠান্ডা বৃষ্টির কালো ক্যানভাসের সামনে দাঁড়িয়ে তারা একে অপরের দিকে মুখ ফিরিয়ে দেখল। অর্ণব নীরবতা ভেঙে বলল, “আমার প্রতিশ্রুতি যে কোনো দূরত্বকেও ভেঙে দিতে পারবে না।”

সাইনি চোখে চোখ রাখল, “তোমার জোর কি জানো? তোমার ভালোবাসা…”

আড়ম্বরহীন এক আহ্লাদে অর্ণব তার হাতে থাকা সাদা পেঁচানো স্ট্রলিম পাতার হালকা কুরতাটি তুলে ধরল, “তুমি বারবার শুনতে চেয়েছো—আমি তোমাকে ছেড়ে যাব না। এটা তোমার।”

সে কুরতায় লুকানো ছিলো তার পুরনো ব্যবহৃত টিশার্ট, যেখানে আজও রটে রঙ ছেঁড়া শহরের রাতের আলো ধরা রয়েছে। সাইনি চোখে অশ্রু, হঠাৎ সামান্য কাঁপন অনুভব করে বলল, “এই শার্টের প্রতিটা দাগে আমার স্মৃতি বাঁকিয়ে রেখেছো?”

অর্ণব বলল, “তোমার প্রতিটা স্মৃতি আমার অন্তরেই অমলিন।”

সাইনি অচেতন ভাবে হাঁটি মুছে কুরতাটি আঁকড়ে ধরল; মুহূর্তেই দুজনেই একে অপরের এত কাছে এগিয়ে এলো যে, ফ্ল্যাটে বাতাসের কম্পন যেন স্তব্ধ হয়ে গেল।

আড়ম্বরহীন একটি নীরব আলো, লিভিং রুমের একপাশে রাখা কাঠের সোফার পাশে, দু’জন দাঁড়াল—শরীরের লম্বা ছায়া দেয়াল জুড়ে মিশে গেল। অর্ণব সাইনি’কে আঁচলে ধরা গলায় একটি আলতো চুমু দিল, যেন শব্দহীন স্বীকৃতি যে আজকের রাতটি তাদের।

সাইনি হতভম্ব চোখে তাকিয়ে রইল, তারপর হঠাৎ অর্ণবের বুকের ঘন-ধড়াফল অনুভব করতে শুরু করল। সেই স্পন্দন তার জীবনের লয় ছিঁড়ে দিয়ে এক নতুন সুর শোনাচ্ছিল—সুর যা শুধু দুজনের অন্তরে বাজে।

আড়ম্বরেভালোবাসার শুরুটা স্বাভাবিক—প্রেমের উষ্ণ আলিঙ্গন, কোমল স্নেহ-মাখা স্পর্শ; কিন্তু আজকের রাতটিতে তারা খুঁজছিল আরও গভীর কোনো অনুভূতি—একটি আত্মার মিশন, যেখানে দু’জন এক হয়ে যেতে পারে, শব্দহীন বিশ্বাসে, দৃঢ় আবেগে।

সেই আভাসেই সাইনি ধীরে ধীরে সরে এলো সিকিউরٹی লক স্ক্রিনের ফ্ল্যাশ লাইটগুলোর নীচে, কাপতে থাকা মোমবাতির নরম আলোয় সে তার হাতের তালুর রেখা অর্ণবের গায়ে ছুঁয়ে বলল, “আমি ভেঙেছি… কিন্তু তুমি ভাঙতে দাওনি।”

অর্ণব মৃদু হাসি দিয়ে বলল, “ভাঙা আমারই ছিলো; ভেঙেছিলে না—তাই আবার গাঁথা গেলো।”

সাইনি চোখে অশ্রু নিয়ে বলল, “আমি যখন তোমার কাঁধে মাথা রাখতে পারি, তখন কোনো শব্দের দরকার নেই।”

সে মুহূর্তে দু’জন নয়, যেন এক আত্মা হয়ে উঠল—মৃদু আলোর ছোঁয়ায়, ফ্ল্যাটের গোপন নির্জন কক্ষের কোণে, তারা এক ক্ষুদ্র দূরত্বে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে মিলনের প্রবল আকাঙ্ক্ষা অনুভব করল।

অরুণব চিলতে চিলতে সাইনি’কে ডেজার্ট হুইপের মতো আলতো করে কোলে নিয়ে নিল—তবে সেটা যৌনতার নয়, বরং স্নেহমাখা আশ্রয়, যেখানে তার সমস্ত দুঃখ, অবিশ্বস্ততা, অনিশ্চয়তা সব বিলীন হয়ে যাবে।

সাইনি রেখে দিল তার সব ভয়, সব অস্বস্তি—সে বুঝতে পারল এ খুমারি শুধু শরীরের নয়, একটি গভীর মনন মিলন, যেখানে প্রতিটি বাক্য না বলা ভালোবাসায় লিখিত।

লিভিং রুম থেকে তারা ধীরে ধীরে সরে এলো শয়নকক্ষের নরম বেডরুমের দিকে। সেখানে রেখেছিল সাদা বেডশীট—যেখানে অপ্রকাশিত এক ভালোবাসার সাদা ক্যানভাসে তারা আজ নিজেদের রঙ মিশিয়ে আঁকতে চলেছে।

বেডরুমে ঢোকার পর অর্ণব মোমবাতি জ্বেলে রাখল বিছানার পাশে, হালকা সোনালি আলো ঘেরা হলো চারপাশ।

সাইনি চোখ বুজে দাঁড়িয়ে রইল—তার স্মৃতির প্রতিটি মুহূর্ত ঝলমল করে উঠল: কলেজের প্রথম চুমু, পিকনিকের স্বপ্ন, আবদার, বিচ্ছেদে কপালে ভিজে যাওয়া অশ্রু।

অর্ণব সেই মুহূর্ত কাজে লাগিয়ে সাইনি’র পিঠে অম্লান চুমু দিল—সে নতজানু হয়ে বলল, “এই স্পর্শ কি তোমাকে নিরাপদ করে?”

সাইনি বুকের ছেঁড়ে থাকা ফাঁকগুলো একরাশ উষ্ণতায় ভরে উঠল, “হ্যাঁ, এই স্পর্শে ভেঙে না যাওয়া অনুভব পাই।”

আড়ম্বরহীন ভালোবাসা তখনই শুরু হলো—তাদের হাতগুলো কথা বলল, বেডশীটের নরম আলতো নাড়া হল তাদের শ্বাসের ছন্দে, আর মোমবাতির আলোয় উল্টো ছায়াগুলো যেন এক অদ্ভুত নৃত্য করল, দুই শরীরের সংকোচন আর প্রসারণে।

তারা কোনো ওষ্ঠপ্রীতির না, বরং অন্তরঙ্গ কথাবার্তায় নিজেদের খুলে দিল একে অন্যের জীবনে—বাতাস ছেঁকে যাওয়ার মতো এক অকারণে আলিঙ্গন, যেখানে প্রত্যেক চুমু যেন পুনরুজ্জীবন।

আড়ম্বরহীন অনুভূতি তীব্র হয়ে উঠল—নরম মোমবাতির জ্বলজ্বল আলোয় সাইনি তার হ্রদযন্ত্রের আভাস শোনাতে লাগল, মনেকরে সে মযাজোড়া শব্দে হারিয়ে যাবে ইচ্ছা।

অর্ণব নিজেকে হারিয়ে ফেলল সেই অনুভবের ঢেউয়ে, যেখানে সব বিভাজন ধুলোয় মিশে যায়; আজকের রাতটিতে তাঁরা পেয়েছিলো এক অমৃতমাখা মিলন, যা শুধুমাত্র দুটি হৃদয়ের গভীরে লেখা থাকে।

সন্ধ্যার আলো থেকে রাতের গভীর নিভৃত রূপে প্রবেশ—তারা ঘুমের দোলনায় ভেসে যাবে, কিন্তু আজকের এই শ্বাস-প্রশ্বাস আর স্পর্শের মিশ্রণে লেখা হবে এক নতুন ভোরের গল্প।

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)