অন্তরের আলোর রেখাপথ - Bangla Choti Golpo

Soumya
0

ঢাকার পরিকল্পিত জীবনের তন্ময় ও কলকাতার কবিতার অন্তর জগতে বাস করা আদি; দূরত্ব, ভাঙা-জীবনের স্মৃতি আর নীরব অনুভূতির মধ্যে উদ্ভাসিত হয় এক আবেগময় সম্পর্ক—যেখানে ভালোবাসা প্রকাশের কথা নয়, অনুভবে নির্ভর করে সম্বন্ধের গড়ে ওঠা স্বতঃস্ফূর্ত. শব্দ ছাড়াই সংযোগ গড়ে ওঠে; এটি আবেগগত যুক্তি, নীরব আকাঙ্ক্ষা এবং বাংলা ছোট গল্পের আকারে অব্যক্ত প্রতিজ্ঞার উদযাপন।

“অন্তরের আলোর রেখাপথ” — একটি Bangla Choti Golpo যেখানে ঢাকার একটি কর্পোরেট অফিসের তরুণ ও কলকাতার একজন অন্তর্মুখী অধ্যাপকের মধ্যকার অন্তরঙ্গ এক অনুভূতির সেতু গড়ে ওঠে—দূরত্ব, কবিতা, এবারের বাস্তব আর নীরব অপেক্ষায়।

গল্পের নাম: “অন্তরের আলোর রেখাপথ”

শরৎ এসেছিল কলকাতার ভিড়হীন বিকেলে। আকাশে সূর্য অবসাদী, বাতাসে ঘ্রাণ ভরা মাটির মধু—সব ভেসে উঠছিল আয়নার মতো আদিনার মনে। একবার স্কুল ফেরার পথে, একটি পাণ্ডুলিপির দোকানে গিয়ে হঠাৎ চোখ আটকে গেল পাশের তাকের এক পুরনো হস্তলিখিত ডায়েরিতে। লাল টোকন সিগারের গন্ধ দিয়ে ভরা সেই পাতায় লেখা ছিল:

“বুকের প্রতিটা শ্বাস যেন তোমার নাম বলে—
সত্যিই ভালোবাসা মানে যখন নিঃশ্বাসটা নামের হৃদয়ে গেঁথে যায়।”

শব্দগুলো আদিনার অন্তরেও প্রবেশ করল, ঠিক যেন গোপন কোনো যোগাযোগের পদক্ষেপ। সেই দিন থেকেই তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন—কোনো অজানা, কিন্তু খুব স্পষ্ট একটা অনুভূতির প্রতীক্ষায়।

তন্ময় তখন ঢাকার একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান-এ ব্যস্ত কর্পোরেট পেশায়। জীবনে সবই পরিকল্পিত: ফ্ল্যাট, ফার্নিচার, সাপ্তাহিক দফতরের বাইরেও একটা ছুটির ভ্রমণ পরিকল্পিত তালিকাভুক্ত। তার জীবন ছিল ঠিক এক সুবিন্যস্ত ছবির মতো, কোনো ভাঙার আঁচও নেই, ঠিক যেন … “Banalata Sen” কবিতার মতো—সব বছর ঘুরে ফিরে আসার মতো এক অপরাজেয় নিশ্চয়তা

তবে একদিন পুলিশের তদন্তের জন্য ঢাকার গ্রন্থাগারে গিয়ে তখনই দেখলেন আদিনাকে। আদি গভীর বিষণ্ণ চেহারায় এক টেবিলে বসে ডায়েরি পড়ছে, চোখে আড়ম্বরহীন এক শান্তি। তন্ময় হঠাৎ জানতে পারল, আদি সেই ডায়েরির লেখক—এক অধ্যাপক, যিনি দীর্ঘদিন ছাপিয়ে আসছিলেন নিজের অনুভূতির ছাপ, কিন্তু কেউ জানতো না কোন অন্তর…

তন্ময় তথ্য বুঝতে বুঝতে, নিজের কী খুঁজছিল সেটার উত্তর পেতে লাগল। ছুটির দিনের বিকেল আর পরিচ্ছন্ন রোডে দেখা হলো—দুজন একে অপরের আওয়াজ শুনতে বা বলতে পারেনি, শুধু চোখটা মিলে গেল, ঠিক কবিতার পরশে গোপন আলো—উভয় অন্তর তখন নিজের একাপেক্ষিক একাকীত্ব বুকে রেখে এক অদৃশ্য উত্তেজনায় স্পন্দিত হয়ে উঠল।

কলকাতার ঝোঁপঝাঁপ ট্রাফিকের মাঝেও আদিনার আগমনে তন্ময় দেখল অচেনা এক উঁচু হৃদয় গড়া—যেখানে একটা শান্ত জলের মতো শূন্যতা, আবার অনুভবের ঢেউ। আদি চাইছিল কোনো গোপন সংলাপ, কোনো নীরব স্পর্শ, আর তন্ময় নিজেই বুঝতে পারল, অন্তরেই কোনো সেতু গড়ার অপেক্ষা যেখানে শব্দ নয়, অনুভূতি।

পরের দিন সন্ধ্যায় কলেজের পুরোনো ক্যাম্পাসে বেঞ্চে বসে দুজন কথা বলল—কোনো লাজ কিংবা সামাজিক বিন্যাস ছাড়াই। আদি বলল, “আমার ভালোবাসা ভর করে কবিতার মতো—পূর্ণ, নির্ভরযোগ্য, কিন্তু একে প্রকাশ করা আমার ভয়।”
তন্ময় হেসে বলল, “ভালোবাসা প্রকাশের আগে তো অনুভব হয়—যেন নিঃশব্দ কোনো গান।”

আদি এক গ্লাস স্টাফড কফি হাতে নিয়ে বলল, “তুমি জানো—আমি ব্যর্থতা নিয়ে লিখি, প্রেম নিয়ে অংশ নিয়ে, কিন্তু কেউ বিশ্বাস করে না—ভালোবাসার গভীরতাটা কারও বোঝার নেই।”
তন্ময় একটু মৃত্যূশীতল চোখে সে অনুভূতি দেখতে পেল—আর চেয়ে বলল, “আমি বোঝার চেষ্টা করতে চাই।”

কলকাতার ছায়াস্লিষ্ট ঘর থেকেই ঢাকার দফতরে তার পদক্ষেপ। পরবর্তী দুই মাস তারা দূর থেকে কথা বলল—প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সামান্য ৫ মিনিটের সংযোগ। দূরত্বের মাঝে স্বপ্নটা মেধার সেতু গড়ল—ঢাকার ফ্ল্যাটে তন্ময় রাতে তার চোখের নিচে এক অদৃশ্য ছাপ বুঝতে পারল, একটি কফি ছাড়া সে যেন নিজের অস্তিত্ব বলতে ব্যর্থ—ঠিক যেন কবিতায় “Amar Bhitor Bahire Ontore Ontore” গানে আসা নিরবে বেঁধে থাকা নিঃশ্বাস

একদিন আদি ফোন করল—কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমি ভয় পাচ্ছি... তুমি একদিন হঠাৎ চলে গেলে?”
তন্ময় নিশ্বাস নিয়ে বলল, “প্রেমে দূরত্ব মানে বিচ্ছেদ নয়—মনে থাক ভালোবাসা ‘অনুভূতির শেষ সেতু’।”
আদি শান্ত হল, তার ফোনটা ক্লুজড করেও মনে হলো, পৃথিবীর সব শব্দ থেমে গেল।

শেষে তন্ময় প্লেনে সামনে থেকে নেমল—কলকাতার বিমানবন্দরে তাকে দেখে আদি চোখে জল ছিল, শরীরের কাঁপুনি ছিল—কোনো শব্দই থেমে গিয়েছিল অনুভূতির প্রান্তে। তারা একে অপরের দিকে এগিয়ে গেল—ঠোঁটে ঠোঁটের অপরিহার্য স্পর্শে অনুভূতির সব ধরণ জাগল। তারা বুঝল, প্রেম কোনো বিধিবদ্ধতা নয়, এটি অন্তর সংলাপ যেখানে শব্দই নয়, অনুভবের আলো।

তারা শেষ বিকেল এক অ্যাপার্টমেন্টে বসে—টেবিলে দুই কাপ কফি, জানালার বাইরে বারান্দার বাতাস খেয়ালে, তারা বলল:
“ভালোবাসার নীরব সেতুটা আজ বুঝে ফেললাম—দূরত্বে স্বপ্ন গড়লে, প্রত্যাশায় নয়, বরং অনুভবে...”

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)